শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১
মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি (পটুয়াখালী)।।
পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জে এতিমখানা ও শিশু সদনে ভূয়া এতিম ছাত্র দেখিয়ে সরকারিভাবে বরাদ্দের লাখ টাকা ভাগ-বাটোয়ারার অভিযোগ উঠেছে। কাগজে-কলমে এতিম থাকলেও ওইসব ছাত্রদের পিতা-মাতাও রয়েছেন অনেকের। অধিকাংশ শিশু সদনে স্টোক রেজিস্ট্রার, বিল ক্যাশ খাতা, ভাউচারের রেজুলেশন, ভর্তি রেজুলেশন, মেচ কমিটি ও ভাউচারের সঙ্গে মিল রেখে ব্যাংক স্টেটমেন্ট কিছুই নাই। যা বিল উত্তোলনের জন্য একান্তই প্রয়োজন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, সম্পাদক ও উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরকে ম্যানেজ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ছাড়াই সরকারি বরাদ্দ উত্তোলন করছেন বলে অনুসন্ধানে জানা যায় ।
মাজারকেন্দ্রিক এতিমখানাগুলোতে সবচেয়ে বড় অনিয়ম । তারা একদিকে এতিমখানার নামে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করে অন্যদিকে ভুয়া তালিকা দেখিয়ে সরকারি বরাদ্দ নিয়ে থাকে। কাগজে কলমে এতিম থাকলেও, বাস্তবে দেখা মেলেনি তাদের।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে জানা যায়, মির্জাগঞ্জে সরকারের তালিকাভুক্ত ১১টি এতিমখানা রয়েছে। যার মধ্যে সরকারি বরাদ্দের আওতায় এতিম দেখানো হয়েছে ১৭৮ জন। নিযম অনুযায়ী এতিমখানার ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী পিতৃহীন অথবা পিতৃমাতৃহীন দারিদ্র্য ৫০ শতাংশ বরাদ্দের আওতায় আসবে। একজন এতিমকে মাসে দুই হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্য খাবার বাবদ ১ হাজা৷ ৬০০ টাকা, পোশাকের জন্য ২০০ টাকা ওষুধ ও অন্যান্য খরচ বাবদ আরো ২০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১২ হাজার করে ৬ মাস পর পর বছরে দুবার মোট ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় একজন এতিমকে।
চলতি অর্থবছরে উপজেলায় প্রথম কিস্তিতে ২ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়ে ১১ টি এতিমখানায়।
গত এক সপ্তাহের সরজমিনে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইয়ার উদ্দিন খলিফা সাহেব (র.) মাজারকেন্দ্রিক ইয়ারিয়া শিশু সদনটিতে কাগজে-কলমে ২৬ জন এতিমের অনুকূলে ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেখানে এর দ্বিগুণ ৫২ জন এতিম শিক্ষার্থী থাকার কথা। কিন্তু সেখানে গিয়ে মাত্র ১০-১২ জন প্রকৃত এতিমের দেখা যায়। এতিমখানার শিক্ষক মো. রাসেল বলেন, ১০-১২ জনের পিতা মাতার মৃত্যু সার্টিফিকেট আছে। তবে সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান মল্লিক বলেন, আমাদের সকল তথ্য সমাজসেবা অফিসে দেয়া আছে। সেখানে গেলে সকল তথ্য জানা যাবে।
উপজেলার আরেকটি মাজারকেন্দ্রিক এতিমখানা চৈতা আল মুত্তাকিন ইউনিছিয়া শিশু সদন। সরকারের বরাদ্দ পাওয়া এতিমখানার তালিকাভুক্ত। কাগজে-কলমে এখানে ১২ জনের অনুকূলে সমপরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানের পরিচালনা কমিটির লোকজন একজন এতিমের মা-বাবার অনলাইন মৃত্যু সনদ দেখাতে পারেনি। মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক মো. আল ফিসানী বলেন, তথ্যমতো এখানে এতিম রয়েছে। তাদের নিয়মিত খাবার, পোশাক ও ওষুধ কিনে দেয়া হয়। তাদের পিতা-মাতার মৃত্যু সনদের অনলাইনে আবেদন করার জন্য বলা হয়েছে।
একইভাবে রামপুরা সিদ্দিকিয়া শিশু সদনে ১৯ জন এতিমের তালিকার সংখ্যার সঙ্গে বাস্তবতা নেই। সেখানের শিক্ষার্থীরা জানান, তারা কেউই এতিম নয় এবং মাদ্রাসায় থাকেনও না, খায়ও না। সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের মো. আবদুল মান্নান বলেন, আমি কিছুই বলতে পারি না। সভাপতির কাছে সকল কাগজপত্র ও তথ্য আছে।
উপজেলার কলাগাছিয়া ছালেহিয়া, গাবুয়া আদর্শ নুরানী শিশু সদনসহ প্রায় প্রতিষ্ঠানের একই চিত্র।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, সরজমিন এতিমখানাগুলো পরিদর্শন করে দেখা হবে। কোনো অনিয়ম পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক শিলা রানী দাস বলেন, পরিদর্শনের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে চিঠি দেয়া হবে। তার তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।